ময়মনসিংহ ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জন সাথে নিয়ে অনেকেই বেড়াতে পারবেন যেসব জায়গায়

0
4208

বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন দিবসের শুরুটা অনেকখানি বিতর্কিত হলেও এখনকার তরুণদের মাঝে এর প্রভাব নিয়ে কোন বিতর্ক করার সুযোগ নেই। স্কুল কলেজ এর কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্ক দম্পতি, সবাই আজকাল এই দিবসটা একটু ভিন্ন ভাবে পালন করার সুযোগ পেলে ছাড়েন না। ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জন সাথে নিয়ে অনেকেই বেড়াতে বের হন।

পর্যটন জগতে ময়মনসিংহ স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে এই জেলায় রয়েছে বেড়ানোর মত অনেক জায়গা। যেখানে ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জন সাথে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন।

শশী লজঃ  শশী লজ ভালোবাসার এক অপূর্ব নিদর্শন। এতো বড় শ্বেত মার্বেল পাথরের ভেনাসের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এটি। স্থানীয়ভাবে এটি ময়মনসিংহ রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। এ লজের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদ। বিভিন্ন ফুলের বাগান, পুকুর আর শিল্পকর্মের এক অপূর্ব নিদর্শন। ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জন সাথে নিয়ে অনেকেই বেড়াতে আসেন এখানে।

বোটানিক্যাল গার্ডেনঃ  বিলুপ্তপ্রায় গাছপালাকে সংরক্ষণ এবং মানুষের কাছে পরিচিত করানোর জন্য ১৯৬৩ সালে এ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে ঢুকেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সারি সারি অচেনা সব গাছ দেখে। সুন্দর বাঁধানো রাস্তা আর তার দুই পাশের সুশোভিত বৃক্ষরাজি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। জেনে অবাক হবেন যে এ গার্ডেনে ৫৫৮ প্রজাতি কয়েক হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্য রয়েছে ফুল, ফল, ঔষধি, লতাপাতাসহ নানা জাতের গাছ। প্রজাতি সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বাগান। আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে পুরো একটা দিন এখানেই কাটাতে পারেন।

ময়মনসিংহ পার্ক ও জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাঃ  ব্রহ্মপুত্রের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা । ১৯৭৫ সালে এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে শিল্পাচার্যের ৭০টি চিত্রকর্ম ছিল কিন্তু কিছু ছবি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন মোট ৬৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, স্কেচ, বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি। এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র।

সংগ্রহশালার ঠিক পাশেই পৌর পার্ক। সুন্দর সাজানো গোছানো ব্রহ্মপুত্র নদীতীরের এ পার্কটিতে অনায়াসে একটা বিকেল কাটিয়ে দেওয়া যায়। এ পার্কের একপাশে রয়েছে নানা মানের রেস্টুরেন্ট আর স্ট্রিট ফুড শপ। ব্রহ্মপুত্রে নৌভ্রমণ করতে চাইলে রয়েছে তারও ব্যবস্থা, আছে গাছপালার অপূর্ব সমারোহ। মোট কথা, একটি প্রাকৃতিক নির্মল পার্কে যা থাকা দরকার সবই আছে।

সিলভার ক্যাসেলঃ ময়মনসিংহে শহরের খাগডহরে বিশাল এলাকাজুড়ে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন হোটেল সিলভার ক্যাসেল। খাগডহর এলাকায় এই হোটেলটির মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। শহরের পশ্চিম সীমান্তে নদের মোহনাতে গড়ে ওঠা হোটেলে অটোরিকশা নিয়ে খুব সহজেই চলে আসা যায়। নিসর্গ উপভোগের দারুণ স্থান এটি। হোটেলটির চারিদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য নজর কাড়ার মতো। সূর্যাস্তের আলো পড়ে নদের ওপর। এ সময় মৃদু হাওয়ার দাপট এক অন্যরকম দোলা দেয় মনে। এখানকার সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করার মতো। এবার ভ্যালেন্টাইনে এটি হতে পারে আপনার দর্শনিয় স্থান।

ইস্টার্ন হেরিটেজ রিসোর্টঃ ময়মনসিংহের শহরতলীর তালতলা এলাকার নদের উপারে গড়ে উঠেছে ওয়েস্টার্ন হ্যারিটেজ রিসোর্ট। ব্যাক্তি মালিকানায় গড়ে উঠা ময়মনসিংহের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র “Estern Heritage Resort” ব্রহ্মপুত্র নদের কূল ঘেসে নতুন ময়মনসিংহ শহরে (নদের ওপারে, সিলভার ক্যাসেলের বিপরীত পার্শে) প্রায় ৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে । সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পরিবেশ সব বয়সি মানুষের ভাল লাগবে। প্রিয় মানুষটির সাথে অগচরে সময় কাটানোর মত উপযুক্ত একটি স্থান। এখানে বারবিকিউ সহ উপভোগ্য সব ধরনের ব্যবস্থাও রয়েছে।

রাবার বাগানঃ  ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াতে রয়েছে সন্তোষপুর বনাঞ্চল। এখানে বৃহৎ এলাকা জুড়ে রয়েছে বড় ধরনরে একটি রাবার বাগান। আর এই পুরো বনাঞ্চল জুড়ে আপনি খুঁজে পাবেন প্রায় তিন শতাধিক বানরসহ বিভিন্ন প্রানী। প্রাকৃতিক পরিবেশে এই সব প্রাণীর কল্যাণে খুব ভালো একটা দিন কাটাতে পারেন আপনি।

মুক্তাগাছা রাজবাড়িঃ   ময়মনসিংহ জেলায় যে কয়টি রাজবাড়ি আছে, তার মধ্যে মুক্তাগাছা রাজবাড়ি অন্যতম। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন এই জমিদারবাড়িটি আমাদের ঐতিহ্যকে বহন করে। রাজবাড়ির সামনে গেলেই চোখে পড়বে ধূসর দরজা। একসময় এই দরজাটিই ছিল সিংহ দরজা, যা সময়ের পরিক্রমায় পরিণত হয়েছে একটি ভগ্ন দরজায়। রাজবাড়ির মূল ফটক বা সিংহ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বেশ কিছু খালি ফোকর। সেখানে ছিল সিমেন্ট, চিনামাটি ও মূল্যবান পাথরে তৈরি সিংহ। রাজপ্রাসাদের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ফটকের দুই পাশে করিডরের পাশে তিনটি করে মোট ছয়টি সিংহমূর্তি ছিল। সে কারণেই এই ফটকটির নাম ছিল সিংহ দরজা।

সিংহ দরজা পেরিয়ে একটু এগোলেই খানিকটা খোলা জায়গা, অনেকটা বাড়ির আঙিনার মতো। আরেকটু এগোলেই চোখে পড়বে একটি মন্দির। এখানে নিয়মমতো পূজা করা হতো। এখানকার কষ্টিপাথরের বিগ্রহ চুরি হয়ে গেছে আগেই, তাই শূন্যই পড়ে আছে পূজামণ্ডপ। পূজামণ্ডপের মেঝে মূল্যবান মার্বেল টাইলস বিছানো ছিল, লোপাট হয়েছে সেগুলোও। এমনকি বাদ যায়নি দরজা-জানালার কপাটও। এই রাজবাড়ির ভেতরে আরো আছে জমিদারের মায়ের ঘর, অতিথি ঘর, সিন্দুক ঘর। এ সিন্দুকের ঘরেই জমিদারের সোনাদানা, টাকা-পয়সাসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিস জমা থাকত। পুরাতন এই ঐতিহ্যের সাথে আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে।

মিনি চিড়িয়াখানাঃ  নিরিবিলিতে সময় কাটাতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের মিনি চিড়িয়াখানার জুড়ি নেই। এই চিড়িয়াখানায় আছে, উট পাখি, হরিণ, কালো ভাল্লুক, কুমির, সজারু, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, কালেম পাখি, ময়না, টিয়া, কাকাতুয়া, ঈগল, চিল, মুনিয়া, সারস, কানিবক প্রভৃতি।

ভ্যালেন্টাইন ডে হোক অথবা নববর্ষ কিংবা ঈদ যে কোন ছুটিতে এখানে লোকের সমাগম থাকেই।

কাছের মানুষের সঙ্গ উপভোগ করার জন্য আসলে বেশি কিছু লাগে না, একটি নিরাপদ কোলাহল-মুক্ত পরিবেশ আর প্রিয় মানুষ হলেই সময়টি চমৎকার কেটে যায়। এভাবে চিন্তা করলে খুব বেশি দূরে কোথাও যাবার প্রয়োজন হয় না, আশে পাশেই খুঁজে নেয়া যায় নিজেদের জন্য একটি বিশেষ স্থান। একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, আপনার ও আপনার প্রিয় মানুষটির নিরাপত্তা সবার আগে।

বিশেষ স্থানে গিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পরার চেয়ে সাধারণ একটি নিরাপদ জায়গা অনেক বেশি কাম্য হতে পারে। কোন নিরিবিলি এলাকায় গেলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যা হয়ে যাবার আগেই চলে আসতে। আবার খুব ভিড় হবে এরকম কোন এলাকা থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

 

 

মন্তব্য করুন