শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি,পলাশ, শিমুল কৃষ্ণচূড়া গাছে লেগেছে অগুন রঙের খেলা । যান্ত্রিকতার কোলাহল মুখর নগরে অতি কর্মব্যস্ত জীবনে যতোই নিপ্রান হিসেবী প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হন না কেন,বসন্তের এ দিনে মন গেয়ে ওঠবেই বসন্ত বাতাসে গো বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান’ আহা আজি এ বসন্তে.এত ফুল ফোঁটে. এত বাঁশি বাজে এত পাখি গান গায়–’’এ সময়েই গাছে গাছে নতুন পাতা,স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
আজ ভুবনের দুয়ার খোলা রঙ লাগলে বনে বনে ঢেউ জাগলে সমীরনে দোল দিয়েছে বনের দোল,ফুল ফুটক আর নাই ফুটুক আজ পহেলা ফাল্গুন(বসন্ত) কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমীয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহবান জানায়।
কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে বসন্তের দোলা,উৎসবে ময়মনসিংহ নগর বাসী মেতে উঠে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে বসন্ত পহেলা ফাগ্লুনকে বরন করে নিয়েছে। বিভাগীয় শহর ও শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের পন্ডিত পাড়ায় স্বপ্নবুনন সৃজন মুখর শিক্ষাঙ্গনে মঙ্গলবার পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কবি ইয়াজদানি কোরাইশী কাজ, বিশিষ্ট ছড়াকার আতাউল করিম, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ইমদাদুল হক সেলিম ও কবি বিলকিস বেগম পাপড়ি প্রমুখ,আলোচনা শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসন্ত বরণ উপলক্ষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
আজ পহেলা ফাল্গুনের সুরেলা দিনে তরুণীরা খোপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুজে বাসন্তী রংয়ের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ফতুয়া পড়ে প্রিয়জনকে সাথে ঘুরছে। নগরীর পথ-প্রান্তরে বাসন্তী হলুদের আভরনে অন্যরঙ গুলোও যেন বসন্তের উচ্ছাসে ফেটে পড়েছে,নববধু থেকে শুরু করে অনেক গৃহিনীরাও বসন্ত বরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রকৃতির মতোই শিল্প-সাহিত্য এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত-বাঙালি জীবনে তাৎপর্যময়,এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একাত্তর সালে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়ে ছিল, বসন্তেই বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধের শুরু, বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে র্ফেরুয়ারী আমি কি তোমাকে ভুলতে পারি।
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পহেলা ফাল্গুন নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসব হিসেবে পালন করছে।