ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটে সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা

0
1360

ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) থেকেঃ হালুয়াঘাটে এক সংখ্যালঘু রবিদাস পরিবারকে নির্যাতন করে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে এক কলেজ ছাত্রীসহ চারজনকে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সুজা (২৬) ও সবুজ (৩২) নামের দুই বখাটে।

আহতরা হলেন, কুসুমী রবিদাস (৩৬), স্বন্দেশী রবিদাস (৫০), ছায়ারানী রবিদাস (৩৫) ও এইচ এস সি পরীক্ষার্থী পুতুল রবিদাস (১৮)। ঘটনাটি ঘটে ১০নং ধুরাইল ইউনিয়নের ধরাবন্নী গ্রামে গত সোমবার বিকেলে। ঘটনার পরপরই হালুয়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করেছেন। আর এদিকে ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথেই হিন্দু কমিউনিটি সম্প্রদায়ের কাছেও ঘটনাটি নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিষয়টিকে নেক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন। জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান। বিস্তারিত জানতে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে কথা হয় হামলার শিকার হরিলাল রবিদাসের (৫৫) সাথে।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী মজিদ মিয়ার পুত্র সবুজ (৩২) ও সুজা (২৬) তাদের পুকুরে ২টি হাঁস যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়ির ছোটবড় সকলকেই রামদায়ের ঘাড়া ও বাঁশ দিয়ে বেদড়ক মারপিট করেন। চারজন হাসপাতালে আছেন বলে জানান। বাকীরাও আহত হয়েছেন। তাদের দাবী সুজা আর সবুজ স্থানীয় শ্মশানের জমি দখল করে পুকুর খনন করে ভোগ দখলে নেন। এখন বাড়িটাও দখলে নিতে চাচ্ছেন। শ্মশানের জমি দখলের পর থেকে উক্ত ব্যক্তিগণ বিভিন্ন সময় তাদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকতেন বলে জানান তারা। তাদের অভিযোগ কি করে তাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করে ভিটেবাড়ি দখল করে নেওয়া যায় তার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেক আগ থেকেই।

এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন, একাদিক বার সালিশ দরবার করেও তাদের সাথে সমঝোতা করতে পারেন নি বলে জানান। ঘটনার দিন হাঁসের মতো তুচ্ছ একটি ঘটনার উছিলাকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সকলকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন এবং বাড়ির মহিলাদেরকে শ্লীলতাহানি ঘটান।

বাড়ির ছোট্ট মেয়ে অনিতা রানী রবিদাস বলেন, মার খেয়ে বাঁচার জন্য নিজেদের ঘরে আশ্রয় নিতে চাইলে টিনের ঘরটিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ভাংচুর করেন। আহত পুতুল রবিদাস চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরবর্তী পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পাড়বেন কিনা সন্দিহান প্রকাশ করেন সকলে। একই অভিযোগ করেন হাসপাতালে চিকিতসাধিন কুসুমি রবিদাস, ছন্দেশী রবিদাস, ছায়ারানী রবিদাস ও পুতুল রবিদাস।

পুতুল রবিদাস বলেন, আমার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে কৌশলে পিটিয়েছে এবং একইসাথে শ্লীলতাহানিও করেছে। পুতুলসহ সকলে এঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেন।৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনিতা রানী রবিদাস ও লিপা রানী রবিদাস বলেন, কলেজছাত্রী পুতুলকে এরা টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে রামদায়ের ঘাড়া দিয়ে মেরেছে। টানাহিঁচড়া করেছে। এছাড়া শরীরের স্পর্শকাতর স্থানেও আঘাত করেছে এই দুই বখাটে।

আহতরা বলেন, পুতুলকে প্রথমে মারধর করেন। তাকে বাঁচাতে অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে প্রত্যেককেই মেরে পিটিয়ে হুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্বার করে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান।

এ বিষয়ে সবুজ ও সুজা মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে গেলে তারা পলাতক রয়েছে বলে প্রতিবেশীরা জানান।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার পিপিএম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করেছি।আমি নিজেও যাবো। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মন্তব্য করুন